শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত SAU স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড
মো: মাসুদ রানা
বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, এদেশের পুকুর, ঘের, বিল, হাওর, বাঁওড় এমনকি নদীতেও খাঁচায় ব্যাপকভাবে মাছ চাষ হয়। মৎস্য খামারিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা বিশ্বে মাছ উৎপাদনে ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছি, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে ২য় স্থান ধরে রেখেছি। মৎস্য খামারিরা মাছ উৎপাদন করার নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তার মধ্যে মাছ চুরি অন্যতম। একটা পুকুরে চুরি হলে খামারিদের পথে বসতে হয় কেননা বর্তমান সময়ে মাছ উৎপাদনের খরচ গত কয়েক বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ চাষিদের এই চুরি ঠেকানো এবং চাষকৃত পুকুর বা জলাশয়ের সঠিক দেখভালের জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপান বাংলাদেশ রোবটিক্স উদ্ভাবন করেছে স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড নামক যন্ত্র যার নাম দিয়েছে ঝঅট স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড।
স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড নামক যন্ত্রটির বিশেষত্ব হলো যন্ত্রটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যন্ত্রটিতে একটি উচ্চ বিকিরণ সম্পূর্ণ ঘূর্ণায়মান লাইট ও তার সাথে একটি উচ্চ রেজুলেশন সম্পন্ন ক্যামেরা লাগানো আছে। যন্ত্রটিতে কিছু নিখুঁত প্রোগ্রাম সেট করা হয়েছে, যা ঐ খামারের যে কোন কর্মচারীর নিখুত কণ্ঠ নিশ্চিত করতে পারবে। যন্ত্রটি সম্পূর্ণ রিনিউয়েবল এনার্জি দিয়ে চলবে সে জন্য যন্ত্রটির সাথে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি সংযুক্ত করা হয়েছে। যন্ত্রটি ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়া কার্যকর থাকবে ফলে যন্ত্রটি ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন সাপোর্ট দিবে।
যন্ত্রটির সাথে পকেট রাউটার সংযুক্ত করা আছে ফলে যন্ত্রটিতে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে যা যন্ত্রটি দিয়ে তোলা ছবি বা ভিডিও দ্রুত সময়ের মধ্যে মোবাইল অ্যাপস ঝঅট স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড এ সংযুক্ত হবে। ফলশ্রুতিতে খামারি যে কোন স্থানে বসে ২৪ ঘণ্টা খামারের সচিত্র রূপ দেখতে পাবেন। যন্ত্রটিতে রোবটিক্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি (অও) ব্যবহার করা হয়েছে ফলে রাতের বেলা যন্ত্রটি থেকে খামারে কর্মরত একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তিকে ডেকে লাইট জ্বালাতে বলবে এবং তৎক্ষণাৎ যন্ত্রটিতে সন্নিবেশিত উচ্চক্ষমতার লাইট জ্বলবে এবং তা পুরো পুকুর প্রদক্ষিণ করবে ফলে চোর শুধু না অনান্য নিশাচর প্রাণী ভয় পেয়ে কাছেও আসবে না, আবার মালিক ঘরে বসেও রাতের সে দৃশ্য মোবাইল অ্যাপস এ দেখতে পারবে এবং সে চাইলে যা বলবে তা পুকুর পাড়ে বেজে উঠবে। এভাবে যন্ত্রটি পুকুর/ খামারকে নিরাপদ রাখবে।
এ ছাড়া যন্ত্রটিতে ইমেজ প্রসেসিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে যা প্রতি ১৫ মিনিট পর পর পুকুরের চারপাশের যে চিত্র মোবাইলে সন্নিবেশিত হবে তা অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রসেস করে বলতে পারবে পুকুর পাড়ে মানুষ না অন্য কোন প্রাণি চলাফেরা করছে, শুধু তাই না যদি মানুষের উপস্থিতি শনাক্ত হয় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইলে নোটিফিকেশন আসবে যা দেখে খামারি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুকুর বা খামারের চুরি ঠেকাতে সক্ষম হবে। শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় উদ্ভাবিত ঝঅট স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড নামক যন্ত্রটি ইতোমধ্যে গাজীপুরের একটি খামারে ব্যবহার হচ্ছে যেখানে কয়েকটি বড় পুকুরকে একটি মাত্র যন্ত্রের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন খামারটির মালিক যা তার নিরাপত্তাজনিত খরচ ৬০% কমিয়ে দিয়েছে।
স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড নামক যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন ব্যয় প্রায় এক লক্ষ টাকা মাত্র এবং যন্ত্রটিতে পকেট রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মাসিক ব্যয় হবে ২৫০-৩০০ টাকা যা একটি খামারের ৪-৫টি পুকুরকে (৪০-৬০ শতাংশ) ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। বাংলাদেশের যে কোন বাণিজ্যিক খামারির জন্য যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন ব্যয় বহন করা সম্ভব। ঝঅট স্মার্ট সিকিউরিটি গার্ড নামক যন্ত্রটি যদি কোন খামারি তার খামার বা ঘেরে প্রতিস্থাপন করতে আগ্রহী হলে ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশিং এন্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগে যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারবেন।
খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ, মাছচাষিরা সরাসরি বাজারে প্রবেশ করতে না পারায় খামারিরা তাদের কাক্সিক্ষত মুনাফা পান না তার উপর যদি পুকুরে চুরি হয় তাহলে মাছচাষির রাস্তায় বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। উদ্ভাবিত যন্ত্রটি পুকুর, ঘের বা খামারের নিরাপত্তা দেবার পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য সেক্টরে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে যা খামারির আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটাবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট ইকোনমি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফিশিং এন্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১২০৭, মোবাইল : ০১৭৪৫-৬২৬১৫৩, ই-মেইল : ranadof@gmail.com